জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে চলে মানবিক ইফতারের আসর। অতীতে এই ইফতারে নিম্নবিত্ত মানুষের ভিড় থাকলেও এ বছর ইফতারের আসরে গণমানুষের ভিড় দেখা গেছে।অর্থনৈতিক মূল্যস্ফীতির কারণে ইফতারে গণ মানুষের ভিড় যেন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি!
করোনা পরবর্তী সময়ে তিন বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর থেকে আবার চালু হয়েছে এ ইফতারের আসর। মানুষের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রতিদিন মানবিক ইফতারের আসরে বিভিন্ন স্তরের রোজাদারদের ভিড় বাড়ছে। ইফতারের আইটেমের মধ্যে ছোলা, শরবত, খেজুর, মুড়ি,পাকুড়া। মাঝে মাঝে কলা ও জিলাপি দেওয়া হয়।
জানা যায়, মসজিদটি চালু হওয়ার পর থেকেই এই ইফতার আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল।প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকে এই মানবিক ইফতারের জন্য।গত বছর মানবিক ইফতারের বাজেট আড়াই লাখ টাকা ছিল। গত বছর ২০০ থেকে ৩৫০ (দুইশো থেকে সাড়ে তিনশো) লোক ইফতার আসরে অংশ নিতো।এ বছর ইফতারের বাজেট আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু এ বছর ৪০০ থেকে ৫০০ (চারশো থেকে পাঁচশো)লোক ইফতারে অংশ নিচ্ছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত সংশোধনের জন্য উকিল নোটিশ
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রতিদিন আসরের নামাজের পর ইফতারের আইটেম নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক গণ কেন্দ্রীয় মসজিদের বারান্দায় বসে মুড়ি,পাকুড়া,ছোলা, খেজুর ও জিলাপি নিয়ে আলাদা প্লেটে রোজাদারদের মাঝে বিতরণ করতে থাকে। ইফতারের সময় হলে কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব ও অন্যান্য দায়িত্বরত ব্যক্তিরা এখানে বসে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একসাথে ইফতার করে। ইফতারের সাথে দেওয়া হয় বিশেষ শরবত।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অনেকেই কিনে ইফতার করতে পারে না। তাদের বৃহৎ অংশ চলে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের এই মানবিক ইফতারের আসরে। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভাসমান লোকজন এখানে ইফতারে অংশ নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ছাত্র ফাহিম (ছদ্ম নাম) জানান, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে প্রতিদিন সাহরিতে সময় খাবারের দাম বেশি। ইফতার সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।তাই মাঝে মাঝে কেন্দ্রীয় মসজিদের ইফতারের আসরে যোগ দিই”।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য মাস্টার্স শেষ করা চাকুরি প্রত্যাশী ফাহিম জানান, “অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করলেও এখনো একটা চাকরি ভাগ্যে জোটেনি। অনেক চাকরির পরীক্ষায় ভাইভা দিয়েছি। কিন্তু চাকরি জোটেনি। ফলে বেকার জীবনযাপন করছি। তাই ইফতারে অংশ না নিয়ে উপায় নেই”।
পথচারী শাকিল হোসেন জানান, “শুনলাম কেন্দ্রীয় মসজিদে রমজান মাসে ফ্রি তে ইফতার দেয়।তাই এখানে ইফতার করতে আসলাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।মন ভরে ইফতার করতে পারলাম”।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ নয়, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, বিজয়নগরে এবি পার্টির ইফতার মাহফিল এবং পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের গণ ইফতার কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ কে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ইফতারের আসরে গণমানুষের ভিড় দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর সেলিম রায়হান বলেন,”আপনার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। তবে অর্থনৈতিক মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ অনেক চাপে আছে। তাই মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এই কারণে হতে পারে”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ডক্টর সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দিন জানান, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির বাতিঘর। সকল সৎ কাজে এই বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সমর্থনে এই ইফতারের আয়োজন। প্রতিদিন গড়ে পাঁচশো লোকজন এখানে ইফতারে অংশ নিচ্ছেন।গত বছরের তুলনায় এবার এ বছর একটু বেশি লোক দেখা গেছে।রিকশাওয়ালা, গরীব এবং বিভিন্ন মুসাফিরের সংখ্যা একটু বেশি”।
আরও খবর পেতে যুক্ত থাকুন CoxsbazarNEWS.com এর সাথে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।